জীবনের স্মৃতির অমলিন পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে কক্সবাজারে কাটানো সেই চারদিন।
ডিসেম্বরের শীতল ভোরের কোমল আলোয় সূর্যোদয়ের সেই মায়াবী দৃশ্য আমাদের হৃদয়কে মোহাবিষ্ট করেছিল। সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর যখন সূর্যের প্রথম কিরণ ছড়িয়ে পড়ল, তখন প্রকৃতির সেই অপরূপ সৌন্দর্য যেন আমাদের মনোজগৎকে নতুন রঙে রাঙিয়ে দিল। বিকেলের সূর্য যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে ডুব দিল, তার লালচে আভা সাগরের ঢেউয়ে সোনালি আলো ছড়িয়ে এক মোহনীয় আবহ তৈরি করেছিল। রাতের গভীর নিস্তব্ধতায় সমুদ্রের গর্জন যেন প্রকৃতির নিজের সুরেলা গান, যা আজও মনে গভীর দাগ কেটে আছে।
চাঁন্দের গাড়ির সড়ক পথে বিমানের গতিতে টেকনাফ জিরো পয়েন্টে যাওয়ার সেই অভিজ্ঞতা এক অনন্য রোমাঞ্চ। ছাদখোলা গাড়ির জানালা দিয়ে কক্সবাজারের পাহাড়-সমুদ্র আর গ্রামগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। হিমছড়ী পাহাড়ে উঠে সমুদ্রের বিশালতা আর সবুজে মোড়া প্রকৃতির মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। দড়িয়ানগরের নীল আকাশে প্যারাসিলিং-এর রোমাঞ্চকর সেই মুহূর্তগুলো যেন জীবনের ফ্রেমে বন্দি হয়ে রয়ে গেল চিরদিনের জন্য।
উত্তাল সমুদ্রের লবণাক্ত ঢেউয়ের সাথে খেলা করতে করতে আমরা যেন জীবনের ছোট্ট সুখগুলো নতুন করে অনুভব করেছিলাম। পাঁচবার সমুদ্রের বুকে ভেসে গিয়ে মনে হয়েছিল যেন প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে পারি। সমুদ্রতীরে কলিগদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময়, সেই শৈশবের সরল আনন্দগুলো যেন ফিরে এলো।
প্রথমবারের ট্রেন যাত্রার অভিজ্ঞতা ছিল স্বপ্নের মতো—জানালা দিয়ে ছুটে যাওয়া প্রকৃতি যেন গল্পের মতো বর্ণিল। পথের সবুজ বনানী, পাহাড়, পাখিদের কলকাকলি, ছোট্ট গ্রাম পেড়িয়ে শহরতলীর জীবনবৈচিত্র আমাদের পথচলাকে স্মরণীয় করে তুলেছিল। কক্সবাজারের এই চারটি দিন শুধু ভ্রমণ ছিল না, ছিল এক নতুন উপলব্ধি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য আর প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কাটানো প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো হৃদয়ের গভীরে চিরন্তন হয়ে থাকবে। এটি শুধু স্মৃতি নয়, জীবনের এক অপরিহার্য অংশ, যা আমাদের মনে বারবার ফিরে আসবে এক চিলতে সুখের পরশ হয়ে।