লিবারেল আর্টস শিক্ষা কি তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক। লিবারেল আর্টস শিক্ষার দুটি প্রাথমিক লক্ষ্য রয়েছে। প্রথম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে অনুধাবন করতে সাহায্য করা যে তারা কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পছন্দ করে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের “Personal learning style” অনুধাবন করতে সাহায্য করার জন্য লিবারেল আর্টস শিক্ষাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে- ত্রিভিয়াম এবং কোয়াদ্রিভিয়াম। লিবারেল আর্টসের দ্বিতীয় প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞানপিপাসু হিসাবে গড়ে তোলা, যার ফলে তারা তাদের পছন্দের বিভাগে নিজ উদ্যোগে জ্ঞান অর্জন করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিভিন্ন রকম চাহিদা এবং মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া লিবারেল আর্টসের অন্যতম লক্ষ্য। লিবারেল আর্টস শিক্ষাপদ্ধতি নিশ্চিত করে যেন একজন মানুষের জ্ঞান শুধু তার পেশাগত জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সমাজের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। লিবারেল আর্টস শিক্ষা পদ্ধতি কোনো নির্দিষ্ট এক দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায় যেন তারা সমাজে সহজভাবে জীবন ধারণ করতে পারে।
লিবারেল আর্টসের সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে জানা যায় যে মধ্যযুগেও এই শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। রোমান সম্রাজ্যের সময়ে লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয়তা লাভ করে। ল্যাটিন লেখক মার্টিনাস ক্যাপেয়া খ্রিস্টাব্দ ৫ম শতাব্দীতে ৭ প্রকার লিবারেল আর্টস তৈরিতে অবদান রাখেন। এই সাত লিবারেল আর্টস হলো-সঙ্গীত, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা এবং অলংকারশাস্ত্র (rhetoric)। এদের মাঝে সঙ্গীত, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানকে একত্রে বলা হতো কোয়াদ্রিভিয়াম এবং ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা ও অলংকারশাস্ত্রকে বলা হত ত্রিভিয়াম। মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রিভিয়ামের মাঝে যুক্তিবিদ্যা অধিক গুরুত্ব লাভ করতো। তবে ইউরোপে রেনেসাঁস যুগে এই ব্যবস্থা পাল্টে যেতে থাকে এবং ত্রিভিয়ামকে নতুন নামকরণ করা হয়- Studiahumanitatis।
আধুনিক যুগে লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থায় যেসকল বিষয় সাধারণত অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা হলো-আর্টস (ফাইন আর্টস, মিউজিক, লিটারেচার), গণিত, সাইন্স, ফিলোসফি, রিলিজিয়াস স্টাডি এবং সোশ্যাল সাইন্স। লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে যেসকল দক্ষতা শেখানোর চেষ্টা করা হয় সেগুলো হলো :
১. বেসিক রিডিং, রাইটিং আর স্পিকিং স্কিল (যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার দক্ষতা দেয়)
২. ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষা (যা সমাজের অতীত সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং সমাজের মূল্যবোধ উপলদ্ধি করতে সাহায্য করে)
৩. ফাইন আর্টস সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষা
৪. বেসিক ম্যাথম্যাটিকসের শিক্ষা
৫. বেসিক সাইন্স শিক্ষা
৬. বেসিক ফিলোসফি/ রিলিজিয়াস শিক্ষা
আপনি হয়তো মনে করেন যে, একজন দাঈ শিক্ষার্থীর খুব বেশি সাইন্স এবং ম্যাথ শেখার প্রয়োজন নেই, তবে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে দ্বিন চর্চা বা চাকরি বা ব্যবসাক্ষেত্রে অনেক কাজই প্রযুক্তির সহায়তায় করতে হয়। তাই সাইন্স এবং ম্যাথে সাধারণ শিক্ষা থাকলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা নিউক্লিয়ার রি-অ্যাকশন সম্পর্কে কথা বলার মত জ্ঞান তারা অর্জন করতে পারবে। সেই সঙ্গে ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইসে সমস্যা হলে তারা বুঝতে পারবে যে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে এবং এটা মেরামত করার জন্য কোন মেকানিকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। প্রযুক্তি, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। দাঈ শিক্ষার্থীদের জন্য এখন শুধু প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনধারা এবং চাহিদা কিভাবে বদলে যাচ্ছে তাও বুঝতে হবে। প্রযুক্তির ফলে সমাজ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা উপলদ্ধি করা এবং সেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া একজন দাঈ’র অপরিহার্য দক্ষতা। বর্তমানে বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে যা অদূর ভবিষ্যতেই আমাদের জীবন ধারা বদলে দিতে পারবে। ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটির ফলে পৃথিবীতে আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে।
একজন দাঈ শিক্ষার্থীকে বুঝতে হবে যে এই প্রযুক্তিগুলো কিভাবে আমাদের সমাজকে বদলে দিতে পারবে এবং তার ফলে কোন কোন জিনিসের চাহিদা সৃষ্টি হবে তা উপলদ্ধি করে সেভাবে প্রস্তুত হওয়া। সময়ের চাহিদার ফলেই দ্বিন শিক্ষা ও দাঈ’র ভুমিকা বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে লিবারেল আর্টস শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে।
তথ্যসূত্র
লিবারেল আর্টস এবং ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা —banglanews24.com